Homeইন্টারভিউপ্রকাশকরা হয়তো এখনও ‘ভালো’ পাণ্ডুলিপি অপেক্ষায় আছেন

প্রকাশকরা হয়তো এখনও ‘ভালো’ পাণ্ডুলিপি অপেক্ষায় আছেন

প্রশাত্ম মৃধা

আজিজ মার্কেটের দোতলায় অত্মরে গিয়ে বসলাম আমি আর রবীন আহসান। অত্মর তখনও আকৃতিতে বড় হয়নি, অত্মরের ভঙ্গিতে অটুট আছে। শিবনারায়ণ দাস বসেন, প্রচুর কথা বলেন, যদিও কখনও জানাননি, তিনি জাতীয় পতাকার প্রথম নকশাকার; সে সংবাদ জেনেছি পরে।
রবীন আহসান একটু গা ঝেড়ে প্রকাশনায় নামতে চায়। একথা জানিয়ে আমার হাতে পা-ুলিপি আছে কি না, আর কার কার কাছে পাওয়া যেতে পারে ইত্যাদি জানতে চাইল। তখন নিজের পা-ুলিপি নিয়ে কিছু কথা বললাম তাকে; সসংকোচ। রবীন তা শুনল। জানাল, পা-ুলিপির ফ্লপি ডিস্ক তাকে দেওয়ার জন্য।
হতে পারে এর পিছনের কথা রবীন কিছু আগেই জেনেছিল, অথবা শুনেছিল বন্ধুদের কারও মারফত। হতে পারে সেখান থেকে আমার মতন গ্রন্থহীনকে গ্রন্থকার করে তোলার সড়্গম অথবা অড়্গম উৎসাহ ওর ভিতরে। এর আগে শ্রাবণ থেকে দুটো বই বেরিয়েছিল বা কিছু বেশি। আমাদের চেনা জানার ভিতরে আলফ্রেড খোকন আর হেনরী স্বপন এই দুজনের। সামনে বেরম্নতে পারে মাসুদুল হক, মুজিব মেহদী, জাকির তালুকদারসহ আরও কারও কারও বই।
কিন্তু রবীন এক কথায়, প্রায় এটুকু বলতেইÑআমার একটা পা-ুলিপি আছে এটুকু জেনেই যে বইটি করতে রাজি হলো, এতে আমি অবাক হয়েছিলাম।
সুশাšত্ম মজুমদার একটি পা-ুলিপি তৈরি করতে বলেছিলেন। তৈরি করেছিলাম। বলেছিলেন মাওলা ব্রাদার্সকে দিয়ে আসতে। দিয়েও এসেছিলাম। এটুকু বলেছিলেন তিনি, আহমেদ মাহমুদুল হকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘ভালো’ পা-ুলিপি হলে বই করবেন। এর আগে অবশ্য মাওলা ব্রাদার্স প্রথম পা-ুলিপির জন্য ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। পুরস্কৃত হয়েছিল শাহাদুজ্জামানের ‘কয়েকটি বিহ্বল গল্প’। বই বেরিয়েছিল ইমতিয়ার শামীমেরও। কিন্তু এরপর আর এই প্রকল্প চালু থাকে না। তারও নাকি কারণ, ‘ভালো’ পা-ুলিপি পাওয়া যায় না। ফলে, ওই পুরস্কার ইত্যাদির প্রসঙ্গ বাদ, এখন থেকে এমনিতেই মাওলা ব্রাদার্স ‘ভালো’ পা-ুলিপি পেলে তরম্নণদের বই করবে। এই কথা জেনে সুশাšত্ম মজুমদার মনে করেছিলেন, আমার পা-ুলিপিটা ‘ভালো’ হতে পারে। সে জন্য তিনি ওটা দিতে বলেছিলেন।
কিছুদিন পরে, মাওলা ব্রাদার্সে পা-ুলিপির খোঁজ নিতে গেলে আহমেদ মাহমুদুল হক ‘ভালো’ ব্যবহার করলেন। বাইরে থেকে আনিয়ে চা খাওয়ালেন। তারপর পা-ুলিপি নিয়ে কথা বললেন। জানতে চাইলেন কেন ছাপা উচিত এই পা-ুলিপি? নিজের পড়্গে যে উত্তর হয় তাই দিলাম। সঙ্গে আত¥বিশ্বাসের মাপজোক নিয়ে এও জানালাম, শ’দুয়েক কপির বেশি ছাপা না হওয়াই ভালো। তিনি খুশি হলেন না। সত্য প্রকাশ সাধারণত মানুষকে খুশি করে না। তাহলে এই বই তো ছাপা হওয়া উচিত না। এমন সিদ্ধাšত্ম তাঁর। আমিও নিজের কথার পিঠে তাই মনে করলাম। তারপর তিনি পা-ুলিপিটা উল্টে দেখতে দেখতে জানতে চাইলেন, আপনার লেখা ছাপা হয়েছে কোথায় কোথায়? আমি জানালাম, কথায় কথায় এও বললাম যাদের বইপত্তর আপনি ছেপেছেন, এই আমার একটু সিনিয়র লেখক যারাÑতাদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার লেখাপত্তর ছাপা হয়েছে, হয়। তখন তিনি যা বললেন, সেই কথা লেখা উচিত না। বাংলাদেশের প্রকাশকদের একাংশ এভাবেই লেখকদের সঙ্গে কথা বলতে অভ্য¯ত্ম। লেখকরাও প্রায় তাই মেনে নিয়েছেন।
আমি শুনলাম, তিনি বললেন, ‘তার মানে আপনি বলতে চান আপনি উনাদের মতন ভালো লেখেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিল না। জানা হবে না। এটা জানার নয়। ধান বা পটলের কারবারি হলে বলতে পারতাম কারটা ভালো, এমনকি প্রকাশক হলেও একটু বলতে পারতাম আমার বই ওরফে ‘আইটেম’ ওরফে ‘মাল’ কেমন চলে। ভালো লিখি কি মন্দ লিখি তার হিসাব কে করে? প্রায় সবাই আমরা সেস্নটে লেখা নাম। খুকুর হাতের মুছনিতেই হয়তো মুছে যাব। সাহিত্যের ইতিহাস বইয়ের কোন অধ্যায়ে কোনখানে জায়গা হবে সেই হিসাব এখনই বা কে করে?
তারপর বেরোল আমার প্রথম বই ‘কুহকবিভ্রম’, ২০০০ সালে। গল্পগ্রন্থ। অন্যদের সঙ্গে আমার বই বেরোলে প্রকাশক রবীনের সাড়্গাৎকার নিল পত্রিকাঅলারা। সেবার অনেক তরম্নণের বই বের করেছিল সে। স্বাভাবিকভাবে পত্রিকার তরম্নণ সাংবাদিকদের উৎসাহ তার দিকে তখন। পরের বছর সেটা চলে যায় ঐতিহ্যের প্রকাশক আরিফুর রহমান নাঈমের দিকে। তারা দুজন কয়েক বছর খুব তরম্নণদের বই বের করেছিলেন।
ওই বছর প্রথম আলোর সাংবাদিক রাজীব নূর জানতে চেয়েছিল, হয়তো কোনো উদ্দেশ্য মাথায় নিয়েই আহমেদ মাহমুদুল হকের কাছে, কেন তরম্নণদের বই বের করেন না? আহমেদ মাহমুদুল হক জানিয়েছিলেন, তরম্নণদের ‘ভালো’ পা-ুলিপি পাওয়া যায় না।
যদিও এরপর সেই তরম্নণদেরই বই বেরম্নল গত দশ বারো বছর। প্রকাশকরা হয়তো এখনও ‘ভালো’ পা-ুলিপির অপেড়্গায় আছেন।

Author

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular